মাদক’ এক অভিশাপের নাম। এক সর্বনাশা ছোবলের নাম। এটি এমন এক সামাজিক সমস্যা। যা অপরাধের জন্ম দেয়নি বরং এর বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। উচ্চতর ডিগ্রী এবং নিজেদের মধ্যে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে লক্ষ্যে বহুপথ পাড়ি জমিয়ে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জ্ঞানার্জন ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার উদ্যান বলা হয়। যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মেধা মননশীল হয়ে জ্ঞান বিস্তারে নিজেদেরকে মগ্ন রাখবে সেখানে জ্ঞান চর্চার পরিবর্তে চর্চা হচ্ছে মাদকের। এ অন্ধকার জগতে পা বাড়িয়ে মরিচীকায় হারিয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যৎময়ী মেধাবী শিক্ষার্থীরা। আর বিলীন হয়ে যাচ্ছে নিজেদের স্বপ্নগুলো। মাদকের প্রতি আসক্তি হয়ে কতশত স্বপ্ন, রঙিন জীবন ধুলিকণার মতো ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছে।
শিক্ষার্থীদের মাদকাসক্তের দায় কার
এক পরিসংখ্যানে জানা যায় দেশে বর্তমানে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ১৫ লাখ ৬১ হাজার ৮১১। যা মোট জনসংখ্যার ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ। তাহলে প্রশ্ন জাগে এর শেষ কোথায়?
শিক্ষার্থীদের মাদকাসক্তের দায় কার
বুয়েট, জাবি, শাবিপ্রবি ও ইবির মতো স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাদকের বিষবৃক্ষের কালো ছায়ার ছাপ পড়েছে । মাদকের স্বল্পদাম ও সহজলভ্য হওয়ায় এগুলোর ক্রেতা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী হওয়ায় প্রশাসনের সন্দেহের তালিকায় পরছে না তারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে সহজেই মিলছে নানা রকমের মাদকদ্রব্য । যেমন: গাঁজা, ইয়াবা, হিরোইনসহ দেশি-বিদেশি নেশাজাতীয় পানীয়। গভীর রাতে এর আসর জমে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায়। বিশেষ করে কেন্দ্রিয় মাঠ, হলের ছাঁদে, নির্জন ঝোপঝাড়ে মাদক সেবনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। রাত যত গভীর হয়, মাদকের আকাঙ্ক্ষা ততই বাড়তে থাকে তাদের মধ্যে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই মনে করে ধূমপান বা মাদক গ্রহণ করা এক ধরনের প্রকৃত স্মার্টনেস। এই চিন্তাধারা থেকেও অনেকে মাদকে পা বাড়ায়। কেউ আবার হতাশা, প্রেমে ব্যর্থতা,পারিবারিক কোলাহল, কেউ আবার রাজনৈতিক বড় ভাইদের সান্নিধ্যে লাভ করার জন্যে সঙ্গ দেয় মাদকের মতো মরনব্যাধী বিষে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাদক বন্ধে নেই কোনো কঠোর পদক্ষেপ ও জোরালো ব্যবস্থা। বেশি ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিরব ভূমিকায় থাকতে দেখা যায়। প্রশাসন ও সেই ভাবে তল্লাশি চালায় না। ফলে মাদক সেবন শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তরুণ শিক্ষার্থীরাও মাদকসেবনে আসক্ত হয়। এমন অবস্থায় প্রশ্ন জাগে, শিক্ষার্থীদের মাদকাসক্তের দায় কার?
শিক্ষার্থীদের মাদকাসক্তের দায় কার
শিক্ষার্থীরা মনে করেন তাদের অতিরঞ্জিত স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক সংকটের হতাশা, মাদকের সেবনের অজ্ঞতা ও ম্যাচুউরিটির অভাবসহ ইত্যাদি বিষয়গুলোকে দায়ী।
শিক্ষার্থীদের মাদকাসক্তের দায় কার
এই বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আল- আমিন বলেন, যথাযথ অনুশাসনের অভাবে শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্তে আসক্ত হয়। অনেক সময় তাদেরকে চিহ্নিত করার পর ও প্রতিবাদ কিংবা যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এ বিষয়ে প্রশাসনের ও যথাযত মনিটরিং এর অভাব রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের মাদকাসক্তের দায় কার
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান বলেন, একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার পূর্বে পারিবারিক বাধ্যবাধকতার মধ্যেই থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর সেই সুযোগটা কমে আসে। এখানে তারা প্রত্যেকেই স্বাধীন। যা অবাধ স্বাধীনতার কারণে অনেক সময় খারাপ বড়ভাই ও বন্ধুদের সাথে মিশে মাদকাসক্তের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
লেখক: হাছিবুল ইসলাম সবুজ,লোকপ্রশাসন বিভাগ,কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়