30 C
Bangladesh
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

ফেলে আসা সোনালী দিনগুলো

মতামত ও ফিচারফেলে আসা সোনালী দিনগুলো
নীরব নিস্তব্দ মেঘলা দুপুর কিংবা রাতের আঁধারে
কেন এই মন অশান্ত হয় বারে বারে — ?
অতীতের স্মৃতিগুলো নীল শাড়ি পরে
দাঁড়িয়ে থাকে আজ বেদনার কাতারে ।
এই সুন্দর সোনালী জীবন হতে —-
কত আপনজন গেছে হারিয়ে ।
ফেলে আসা সোনালী দিনগুলো
 শৈশবের সেই হারানো ধুলোমাখা দিনগুলো আজো রঙিন হয়ে ভেসে উঠে স্মৃতির ক্যানভাসে। আমি আজো হারিয়ে যেতে চাই সেই দিনগুলোতে; প্রকৃতির নিয়মে সেটা সম্ভব না জেনেও মন ভীষণ ব্যাকুল হয়ে ওঠে। আবার যদি এক পলকের জন্যে ও  ফিরে পেতাম সোনালী দিনগুলো!
ফেলে আসা সোনালী দিনগুলো
আমার শৈশব কেটেছে  গ্রামীণ আবহে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়ানো গ্রামীন পরিবেশে। গ্রামীন মায়ের ছায়ায় বেড়ে ওঠা শৈশব কাল আজ সব কিছুই স্মৃতির ক্যানভাসে।
ফেলে আসা সোনালী দিনগুলো
বৈশাখের ঝড়ো হাওয়া কিংবা বর্ষণের দিনের কথা কার না মনে থাকে! মনে পড়ছে, সেই ঝড়ের মধ্যে ভিজে ভিজে আম কুড়ানোর প্রতিযোগিতা , ঘর বন্দি হয়ে  মুড়ি আর চাল ভাজা খাওয়ার দৃশ্য ; চার টুকরো কাগজের চুর,পুলিশ,ডাকাত আর বাবু খেলার মুহূর্তগুলো। সময়ের সাথে সাথে সব কিছুই হাড়িয়ে গেছে। আজও প্রকৃতির নিয়মে কালবৈশাখী ঝড় আসে কিন্তু ফিরে আসে না,  বৃষ্টিতে ভিজে  মাটিতে  হামাগুড়ি দিয়ে  আম কুড়ানোর দিনগুলো।
ফেলে আসা সোনালী দিনগুলো
গ্রীষ্মের সেই কাঠ ফাটা রৌদ্রের বিকেলে ঘুড়ি কাটাকাটি আর ঘুড়ি দিয়ে আম খাওয়ার দৃশ্যটা ছিল বেশ রোমাঞ্চকর। জোৎস্নার রাতে চোর-পুলিশ কিংবা বউ ছোঁয়া খেলায় মেতে উঠতাম তখন।
ফেলে আসা সোনালী দিনগুলো
কিন্তু আজও নীল আকাশে ঘন আধারে রাত্রী নামে, একঝাক ঝোনাকির দল আলো ছড়ায় কিন্তু নেমে আসে না হারিয়ে যাওয়া ধুলো মাখা দিন গুলো।
ফেলে আসা সোনালী দিনগুলো
প্রকৃতি সাজছে আপন সাজে, গাছে গাছে মুকুল গজায়, কুকিলের কুহু কুহু কন্ঠে বসন্তের আগমন ঘটে কিন্ত  শৈশব আর ফিরে আসে না আপন নীরে। পরন্ত বিকেলে টায়ারে ধাক্কা দিতে দিতে বন্ধুদের সাথে চলে যেতাম দুরন্তগতিতে। চালাতাম সুপারি গাছের পাতার গাড়ি, ধুলো মাখা বাতাসে টেনে নিয়ে ছুটত অন্যজন। মনে আছে বিয়ারিং এর গাড়ির কথা? কখনো যে ভুলার মতো নয়। এক সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে ছুটে বেড়ানোর দিনগুলো আজও শৈশবকে মনে করিয়ে দেয়।
ফেলে আসা সোনালী দিনগুলো
স্কুলের বাঁধাধরা জীবনটাই যেন ছিল কাঁটাযুক্ত । পেটে ব্যাথার অজুহাতে স্কুল ফাঁকি দিয়ে মার্বেল আর  লাটিম খেলা, বন্ধুদের খাতার পাতা চুরি করে এরোপ্লেন বানানো। কলা আর আম চুরি করে ভর্তা বানিয়ে লুকিয়ে খাওয়ার দৃশ্যগুলা খুব আবেগি করে তুলছে আজ। কাঠফাটা গরমে দীর্ঘশ্বাসে যাপটি মেরে পুকুরে সাঁতার কাটা, কাঁদা দিয়ে ছোড়াছুড়িসহ হাজারো স্মৃতি জড়িয়ে আছে শৈশবে।
ফেলে আসা সোনালী দিনগুলো
পোষের সেই হার কাঁপানো শীতের সকালে আম্মুর কাছ থেকে মুড়ি আর খৈ নিয়ে মসজিদে ছুটে চলার দিনগুলো ভীষন মনে পড়ছে। হাড়ি ফুটো করে খেজুরের রস খাওয়া,গাছ বেয়ে খেজুরের রস চুরি করে খাওয়া আর গাছের সাথে লাগানে কাঠিতে মুখ দিয়ে খাওয়ার দৃশ্য ছিল অপ্রতুল।
ফেলে আসা সোনালী দিনগুলো
শীতের দুপুরে গোসলের পর  আগুন পোহানোর দৃশ্যেগুলো খুব উষ্ণ  করে তুলে মনকে আজ । মনে পরে সেই শীতের সকালে আম্মুর হাতের পিঠাপুলি খাওয়া নিয়ে ভাই বোনদের সাথে খুনসুটির দিনগুলো আজ খুব আবেগী করে।
আজ সময়ের সাথে হারিয়েছি সবই, ভাই-বোন আজ কত দূরে, দেখা হয় কালে-ভদ্রে। সবই আছে তার পরেও মনে হয় কিছু একটা হাড়িয়ে গেছে হৃদয়ের আঙ্গিনা থেকে।
চোখ বুঝলে এখনো দুচোখ ভেসে  বেড়ায় আর কান পাতলে শুনতে পাই মায়ের  আওয়াজঃ সারা বিকেলে ফুটবল মাঠে খেলার শেষে মায়ের বকুনি,হারিকেনের আলোয় মায়ের সন্ধাকালীন ব্যস্ততা চোখে লেগে আছে। আমি আজও নিয়মের আলোয় খুজে বেড়াই মায়ের সেই চাঁদমুখ খানা।
ফেলে আসা সোনালী দিনগুলো
ছেলেবেলায় আরেকটি মজার খেলা ছিল মুদি দোকান। লাঠি ও নারকেল কিংবা গাছের পাতার ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হতো এ দোকান। মায়ের কাছ থেকে চকলেট কেনার জমানো টাকায় পুঁজি ছিল এ ব্যবসার। পরে নানারকম খাবারি পন্যে বন্ধুদের কাছে একটু বেশি দামে বিক্রি করাই ছিল এ খেলার মাজেজা।
ফেলে আসা সোনালী দিনগুলো
ভাই -বোনদের পিছু পিছু দুই টাকা নিয়ে ঈদে যাওয়ার আনন্দ গুলো আজ বড্ডই মিস করছি। বিটিভির সামনে বসে  চাঁদ দেখার খবরের মুহুর্তগুলো ছিল অপেক্ষমান । মিস করছি বাশ ঝারের তেপান্তরে ওকি দিয়ে চাঁদ দেখার আমেজটুকু। ঈদের সেই আমেজে মন আজ মেতে ওঠে না, মেতে ওঠে না আব্বাসউদ্দীনের সেই রেকর্ড- ‘ও মন, রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’। ধুতরো ফুলের মতো চোঙের মুখের কাছে বসে থাকতাম গানের নেশায় আসন্ন উৎসবের আমেজ নিয়ে। কতকাল যে হয়ে গেল, তবুও বহু যুগের ওপার থেকে এই গানের রেশ এখনও মনটাকে কেমন যেন স্মৃতিকাতর করে তোলে।
ফেলে আসা সোনালী দিনগুলো
প্রতিদিন এই ব্যস্ত নগর পথে হারিয়ে যাই জীবন যুদ্ধের মিছিলে, তবু শত ব্যস্ততায় মনে পড়ে শৈশব, স্মৃতির মিছিলে ক্রমাগত হারিয়ে যাই। দীর্ঘশ্বাসগুলো বুকের মাঝখানে প্রচণ্ড শব্দ করে জানান দেয়, আমি ভালো নেই। ভীষণ একা লাগে; খুব নিঃসঙ্গতায় ভুগি, চারপাশে কি যে জীবনের দৌঁড় প্রতিযোগীতা আশেপাশের মানুষের, একটা মানুষের সময় নেই দু-দন্ড কথা বলার, সবাই ব্যস্ত এই ব্যস্ত নগরীতে। সবাই ভুগছে এই অসুখের শহরে, একটা মানুষ ও সুখী নেই। কেবল সুখের তরে কি সুন্দর নিঁখুত অভিনয় করে যাচ্ছে; অথচ দিন শেষে মধ্যরাতে সবাই কী ভীষণ একা!
ফেলে আসা সোনালী দিনগুলো
আজ সবাই আছে; তবুও মনে হয় কোথাও কেউ নেই, মা নেই , বাবা নেই, দাদা-দাদী, নানা নানী কোথাও কেউ নেই, অথচ তাদের সাথে কাটানো শৈশবের স্মৃতি বার বার উঁকি দিচ্ছে মনে। মাঝ রাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে এখন আর ঘুম হয় না, শৈশবের স্মৃতির করাঘাতে এখন মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়ি, তখনও মায়ের কোমল হাতের ওম খুঁজে ফিরি, বাবার করুণ চেহারা ভেসে উঠে, জগতের সব গল্প থামে, কেবল শৈশবে জড়িয়ে থাকা বাবা মায়ের গল্প কখনোই থামে না, ইট পাথরের এই শহরে আমি বার বার সেই গল্পে বিভোর থাকি।
লেখক: হাছিবুল ইসলাম সবুজ,কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। 

Check out our other content

Check out other tags:

Most Popular Articles