30 C
Bangladesh
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

শরিফুল ইসলামের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প 

মতামত ও ফিচারশরিফুল ইসলামের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প 
প্রথম বর্ষেই আমি দেখলাম সিনিয়র ভাই-আপুরা, সহপাঠীরা বিসিএস স্টাডি, ক্যাডার হাওয়ায় লাগবে প্রভৃতি বিষয় নিয়ে সর্বত্র ও সর্বক্ষণ আলোচনায় মেতে থাকতো। আমি তখনই অবাক হতাম আর ভাবতাম বিসিএস ক্যাডার না হতে পারলে কি জীবন বৃথা? আমরা তো ভিন্ন কিছুও করতে পারি!  সত্যি কথা বলতে আমি তখন থেকে সারাক্ষণ চিন্তা করতাম: “চাকুরি করব না, চাকুরি দেব”। অবশেষে সকলের সহায়তায় সালে২০১৯ সে পথেই হাঁটতে শুরু করি। শুরু হয় উদ্যোক্তা জীবন। এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা জানাচ্ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম।
শরিফুল ইসলামের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প 
ফেসবুকভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শরিফুল’স ফ্যাশন (Shariful’s Fashion) এর কর্ণাধার তিনি। একই নামে ফেসবুক পেজে এবং গ্রুপের মাধ্যমে চলছে কার্যক্রম। শুরুটা হয়েছিলো, যশোরের বিখ্যাত খেঁজুর গুড় নিয়ে। তারপর হাঁটি হাঁটি পা পা করে এই যুক্ত হয়েছে পোলো শার্ট ( গোল গলা ও কলারসহ), শার্ট, সকল ধরণের প্যান্ট, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিচ, জার্সি- ট্রাওজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ও সুন্দরবনের মধু।
শরিফুল ইসলামের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প 
তিনি জানান, এভাবেই নিজের কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি অপরের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
শরিফুল ইসলামের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প 
এই উদ্যোক্তা জানান, আসলে যেকোনো কাজ শুরু করতে হলে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। আমি শুরুতে অস্তিত্ব সংকটে ভুগেছি অনেক। সারাক্ষণ দুঃশ্চিন্তায়ও ভুগতাম।  আমি মনে হয়ে ভুল পথে যাচ্ছি। সকলে যেমন চাকুরি পিছনে ছুটছে, আমারও তাই করা উচিৎ।
শরিফুল ইসলামের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প 
তিনি আরও বলেন, অনেকে ঠাট্টা করত কাঁপড় ব্যবসায়ী বলে! অনেকে উপদেশ দিতো, চাকুরি না পাইলে জীবন বৃথা, চাকুরি পাইলে সমাজে বিরাট সম্মান, আরও অনেক কিছু। আর সত্যিই আমি বিজনেস ছেড়ে দিয়েছিলাম কিছুদিন, কারণ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতাম  সারাক্ষণ। পুনরায় সকল বাঁধা পেরিয়ে,  দৃঢ়তার সাথে শুরু করেছিলাম আমার স্বপ্নের  বিজনেস। এখন সফল উদ্যোক্তা হতে পেরেছি। প্রতিদিন সফল এ কারণেই বলছি কাস্টমাররা খুশি আমার প্রোডাক্টে, কাঁপড়ের গুণাগুণ নিয়ে সবসময়ই পজিটিভ রিভিউ পেয়ে থাকি।
শরিফুল ইসলামের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প 
শুরুর গল্প শুনাতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুতে কারো তেমন সহায়তা পাইনি, এমনকি পরিবারের সহায়তাও পাইনি। পরিবার থেকে বলা হতো, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছিস কি উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য? আমি অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলেও তারা শুনতো না।
শরিফুল ইসলামের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প 
বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে সৃষ্টিকর্তার কৃপায় এখন আমার ব্যবসা অনেক ভালো পর্যায় আছে। প্রতিদিন ৩-৪ হাজারেরও বেশি বিক্রি হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়াও বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিভিন্ন জায়গাতে নিয়মিত আমার পোষাক সেল করছি ও পৌঁছে দিচ্ছি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে।
শরিফুল ইসলামের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প 
এ পর্যন্ত ২ জন বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন বলেও জানান এই উদ্যোক্তা। তবে এই সংখ্যা দশ হাজার জন পৌঁছানোর ইচ্ছা রয়েছে তার।
শরিফুল ইসলামের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প 
আমি যেহেতু খুবি শিক্ষার্থী, তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষক, সিনিয়র, সহপাঠী, জুনিয়র আমাকে এখন অনেক সহায়তা করে থাকে ও অনুপ্রাণিত করে থাকে। আমার বিজনেসের ৫০% সেল হয় ক্যাম্পাসেই।
শরিফুল ইসলামের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প 
অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আমার সাপোর্ট করে থাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে। আমার দ্বিতীয় পরিবার হলো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, আর এই পরিবার থেকে সাপোর্ট পেয়ে আমি অনেক খুশি! কিছু অনুভূতি লিখে বা বলে বুঝানো অসম্ভব, আমারও ঠিক তেমন।
শরিফুল ইসলামের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প 
বর্তমানে উদ্যোক্তা হতে বাঁধা অনেক। হাসি-ঠাট্টা, বিদ্রুপ,নিরুৎসাহিত প্রভৃতি। আমি আমার যাত্রাই দৃঢ় ছিলাম, কখনো মন খারাপ করে বিজনেস ছেড়েও দিয়েছিলাম, অনেক উত্থান- পতনের কাহিনি।
শরিফুল ইসলামের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প 
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, আমি বিশ্বের দরবারে দেশীয় পণ্যকে তুলে ধরতে চাই। আমার বিজনেসকে বিশ্বব্যাপী প্রসার করতে চাই সততার সাথে। ক্রেতাকে না ঠকিয়ে বিশ্বস্ততার সাথে এগিয়ে যাওয়া। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গরিব শিক্ষার্থীসহ, বিভিন্ন দেশের গরীব শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ বহন করব, আমার বিজনেসের তহবিল থেকে ইনশাল্লাহ।
লেখক:খুবি প্রতিনিধি, মেহেদী হাসান

Check out our other content

Check out other tags:

Most Popular Articles