আজ রবিবার(০৫ জুন ২০২২) ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশগত মান উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ আর জনসচেতনতার লক্ষ্যে পালন করা হয় এই দিবসটি। প্রকৃতি এই পরিবেশকে সমৃদ্ধ করার জন্য তার পুরোটা উজাড় করে দিয়েছে। কিন্তু প্রকৃতি থেকে পাওয়া এই সুন্দর পরিবেশটিকে আমরা কি রক্ষা করতে পারছি? পরিবেশ দিবস ২০২২ নিয়ে কি ভাবছেন আজকের এই নতুন প্রজন্ম? জানব বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে।
মোসা:লতিফা হেলেন
মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়(২০১৯-২০)
নতুন প্রজন্মের ভাবনায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস
“পরিবেশ” যা আমাদের সুস্থ ও সুন্দর ভাবে বেচেঁ থাকার জন্যে অপরিহার্য। মার্গারেট মিড বলেছেন “পরিবেশ না থাকলে আমাদের সমাজেরও কোন অস্তিত্ব থাকবে না”। কিন্তু বুঝে না বুঝে, প্রয়োজনে- অপ্রয়োজনে বিভিন্নভাবে আমরা আমাদের পরিবেশ দূষণ করে চলেছি।
২০২২ সালের ফেব্রয়ারি মাসে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে “কোভিডের চেয়ে পরিবেশ দূষণের কারণেই বেশি সংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছে” । এই পরিবেশ দূষণ বছরে প্রায় ৯০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটাচ্ছে। অথচ গুরুতর এই বিষয়টি বেশির ভাগ সময় আমরা এড়িয়ে যাই। পরিবেশ দূষণের কারণে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে,উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত নগরায়নের ফলে প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে, গাছপালা নির্বিচারে কাটা হচ্ছে। বাইরে বের হলেই ডাস্টবিন থেকে বিভিন্ন বস্তুর দুর্গন্ধে নাক – মুখ বন্ধ রাখতে হয়। এই সকল দূষণ আমরাই তো করছি এবং আমরা নিজেরা যদি সচেতন না হই, তাহলে পরিবেশ কখনোই রক্ষা করতে পারবো না। পরিবেশ নিয়ে বর্তমানে বিশ্ব অনেক বেশি সচেতন। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই বিষয় গুরুত্বের সাথে আলোচনা করছে।
পরিশেষে,আমরা সবাই একটি সুন্দর পৃথিবীর সপ্ন দেখি।আমরা যেন আমাদের নতুন প্রজন্মকে একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ উপহার দিতে পারি, এটিই একান্ত কাম্য।
মোঃ রেদওয়ানুর হক শুভ
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়(২০১৯-২০)
নতুন প্রজন্মের ভাবনায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস
পরিবেশদূষণ রোধ, পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে ১৯৭৪ সালে ৫ জুন জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির(ইউএনইপি) আওতায় পালিত হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পৃথিবীর চারপাশের পরিবেশ টিকিয়ে রাখতে বাস্তুতন্ত্রের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু মানুষ নিজেরাই স্বার্থ হাসিলে অপব্যবহারের মাধ্যমে ধ্বংস করছে বাস্তুতন্ত্র। এরই ফলশ্রুতিতে জাতিসংঘ উদ্যোগ নিয়েছে নতুন প্রজন্মের সাথে প্রকৃতির শান্তি স্থাপনের অঙ্গিকার। আমাদের চারপাশে পরিবেশের উপাদানগুলোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকায় আমরা টিকে রয়েছি পৃথিবীতে, কিন্তু দিনের পর দিন ক্রমান্বয়ে মানুষের নির্বিচার কর্মকান্ডে সব কিছু বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। কলকারখানার যানবাহনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, বনাঞ্চল নিধন, জৈব বর্জের পচন প্রভৃতির কারণে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ক্রমান্বয়ে গ্রীনহাউজ গ্যাসের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে গত ১০০ বছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে, এবাবে চলতে থাকলে আগামী ১০০ বছরে বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে বিশ্ব। এ ছাড়াও বাতাসে ধোঁয়া, ধুলোবালি, বিষাক্ত সিসা, ড্রপলেট, বস্তুকণা, পার্টিকুলার মেটার ও বিষাক্ত গ্যাসের কারণে শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ, ক্যান্সারসহ নানাবিধ রোগের সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ।
জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প ব্যবহার, পানিদূষণ রোধ,বিশুদ্ধ পানীয় জলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা, কার্বন নির্গমন হ্রাস, কীটনাশকের বিকল্প ব্যবহার, পলিথিনের বিকল্প ব্যবহার, পারমানবিক অস্ত্র ও জীবাণু অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা ইত্যাদি বিষয় বর্তমান মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই জাতিসংঘের একার পক্ষে বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, আমাদের সকলের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া আবশ্যক, তাহলেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমরা সফল হবো। এই বৈশ্বিক সমস্যায় প্রত্যকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমাদের পরিবেশ হোক দূষণ মুক্ত।
সানজীদাহ তানজীম,
উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়(২০১৬-১৭)
নতুন প্রজন্মের ভাবনায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস
পরিবেশ দিবস 2022-এর থিম হল ‘কেবল এক পৃথিবী‘,। মহাবিশ্বে একমাত্র জীবন ধরনে সক্ষম গ্রহ হলো পৃথিবী। যতোই আমরা চাঁদ, মঙ্গল জয় করি, পৃথিবী একটাই। আর এই একটা পৃথিবীর প্রতি কৃতজ্ঞতা না দেখিয়ে আমরা বরং নানাদিক থেকে পৃথিবীর পরিবেশের ক্ষতি করে যাচ্ছি। একজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি জানি পরিবেশে গাছের গুরুত্ব কতোটা। কিন্তু শুধু বৃক্ষরোপণ করে আমরা আমাদের ধরিত্রি মাতাকে রক্ষা করতে পারবো না। পরিবেশ শব্দটির সাথে যুক্ত হয়েছে অনেক অনেক দূষণ। আমরা নিজেরা যদি সচেতন না হই, নিজেরা যদি নিজেদের মাটি, পানি, বাতাস তথা সামগ্রিক পরিবেশ, এমনকি শব্দ দূষণ, আর দূষণের লিস্টে নতুন সংস্করণ -আলোক দূষণ “- এতো দূষণের মাঝে আমাদের পরিবেশ প্রকৃতি রক্ষা করবো কি করে? একজন অপরজনে দোষারোপ না করে, যার যার অবস্থান থেকে পরিবেশের প্রতি যদি দ্বায়িত্বশীল হই, সংবেদনশীল হই তবেই সফল হবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস, তবেই রক্ষা পাবে মানবকূল।