fbpx

এই ক্যাম্পাস পত্রিকা

Homeপ্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সফল হতে লেগে থাকার বিকল্প নেই

সফল হতে লেগে থাকার বিকল্প নেই

Published on

যশোদা জীবন দেবনাথের জন্ম ফরিদপুরে। ছেলেবেলা থেকেই জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে নিজের অস্তিত্বের জানান দেন তিনি। মাত্র ছয় বছর বয়সেই পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয় তাকে। জীবনের সাথে ঝলসে যাওয়া জীবনের নির্মম অভিজ্ঞতার সাক্ষী তিনি। বর্তমানে তিনি বেঙ্গল ব্যাংকের পরিচালক। এর চেয়েও অধিক পরিচিত টেকনোমিডিয়া লিমিটেড, মানি প্লান্ট লিঙ্ক ও প্রোটেকশন ওয়ান প্রাইভেট লিমিটেডের কারণে। দেশের এটিএম মেশিনের সিংহভাগই সরবরাহ করছে তার প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি তিনি সফলতা-ব্যর্থতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন এই ক্যাম্পাসের সাথে। তার মুখোমুখি হয়েছিলেন এই ক্যাম্পাসের প্রতিনিধি মো.ফয়সাল আহমেদ
এই ক্যাম্পাস: কেমন আছেন, দিনকাল কেমন চলছে?
ড.যশোদা জীবন দেবনাথ: খুব ভাল আছি। সবকিছু মিলে ভালোই চলছে।
এই ক্যাম্পাস: ব্যক্তিগত জীবনে কোন বিশেষ ঘটনা আপনাকে প্রভাবিত করেছিল কিনা?
ড.যশোদা জীবন দেবনাথ: আমার ছোটবেলার ইতিহাসটা বেশ সুখকর ছিলোনা। আমাদের ছোট এক পরিবারে বাবা কৃষি কাজ করতেন। অনেক সংগ্রাম, যুদ্ধ করেই পার করেছি প্রতিটি দিন। এ যুদ্ধ দারিদ্রতার সাথে, খাবারের সাথে, নিজের অস্তিত্বের সাথে। এভাবেই আমার বেড়ে ওঠা। ১৯৭১ সালে আমার বয়স তখন মাত্র তিন মাস। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বাবা গুলিবিদ্ধ হয়। আমার বাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ওই সময়ে আমরা অনেক কষ্টে ৬ দিন হেটে ফরিপুর থেকে রানা ঘাটে চলে যাই। আমরা শরণার্থী শিবিরে দীর্ঘ নয় মাস কাটানোর পর বাংলাদেশে এসে দেখি আমাদের বাড়ি ঘরের কিছুই অবশিষ্ট নেই। এর আগেই আমাদের গ্রামে সাতজনকে একযোগে গুলি করে হত্যা করে পাকবাহিনী। ওই সাতজন নিহতের মাঝেই আমার পিতামহও একজন। এসবকিছুই বাবা মায়ের স্মতিচারন। আমার স্কুল জীবন অবধি দারিদ্রতার চরম সীমানাকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। দেখেছি জীবনের সাথে ঝলসে যাওয়া এক ভিন্ন জীবনকে। আমার এসএসসি পরিক্ষার আগ মুহূর্তে মুশলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। টানা তিনদিনের এই বৃষ্টি। এ সংকটময় সময়ে প্রথম দিনে আমাদের বাড়িতে খাবারের মত কিছুই ছিলোনা। মা কিছু গম ঢেঁকি ছাটা করে আনলেন। সেই গম দিয়ে খাবার বানালেন। এভাবেই সংকট আর সংশয়ে কেটেছে প্রতিটি মুহূর্ত। দ্বিতীয় দিনেও খাবারের মত কিছুই নেই। একদম কিছুই না। তৃতীয় দিনে অবস্থা আরও খারাপ। বাবা মায়ের অসহায় চাহনি আর কিছুই করতে না পারার দায় আমাকেও কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল।
বাড়ির পাশের নারকেল গাছ থেকে কয়েকটা নারকেল পেরেছিলাম আমি। দ্বিতীয় গাছে উঠতে গিয়ে আমার পায়ের দড়ি ছিঁড়ে যাওয়ায় অনেক উপর থেকেই নেমে আসতে হয়। একদিকে বুকে ক্ষত থেকে রক্ত আরেকদিকে মাথায় নারকেল নিয়ে গ্রাম থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কানাইপুর হাটে গেলাম। নারকেল বিক্রি করা টাকা দিয়ে দুই কেজি চাউল ও একটি ছোট ইলিশ মাছ কিনে এনেছিলাম। মা সেগুলো রান্না করে আমাদের দিলেন। আমার জীবনের সবচেয়ে সুস্বাদু সেই খাবার। সেই থেকেই এখনো আমার বৃষ্টি হলেই মন খারাপ হয়। অতীতের সেই স্মৃতি হানা দেয় বন্ধ দরজায়। মনে হয় দারিদ্রতার সেই ছায়া আমাকে আবারো ভর করেছে।
এভাবেই সময়ের চাকার সাথে আমার বেড়ে ওঠা। ভাঙ্গা গড়ার এক অবিরাম-অবিরত যুদ্ধে। গ্রামের পাশে জনতা স্টোরে আড্ডা দিতাম।
সেখানে বন্ধুদের অনেক বলেছি আমাকে একটি চাকরি জোগাড় করে দিতে। কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। মানুষের অর্থবিত্ত না থাকলে শুভাকাঙ্ক্ষীরাও পাশে থাকেনা।
অনেক পরিচিত মুখ মুহূর্তেই অপরিচিত হয়ে ওঠে। তবে জনতা স্টোরে স্বপন নাম করে আমার এক বন্ধু ছিলো। সে কর্মচারীর কাজ করতো। তার সহযোগিতায় আমি সেই দোকানে কাজ করার সুযোগ পাই। দোকান মালিকের বাড়িতে সকলের খাওয়া শেষ হলে টেবিল পরিস্কার করে সেখানেই আমি ঘুমাতাম। সকালেই আবার দোকান খুলতাম। এভাবেই সময়ের সাথে আমিও বুঝতে শিখি জীবনকে।
এই ক্যাম্পাস: সংশয় আর সংগ্রামের এতটা পথ পাড়ি দিলেন, কে পর্দার আড়াল থেকেও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?
ড.যশোদা জীবন দেবনাথ: অনুপ্রেরণা বলতে আমার সেই শৈশবের ছায়া মোস্তফা কামালকেই বুঝি। এছাড়াও কিছু বন্ধুরা পাশে থেকেছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। জীবনের এই পর্যায়ে এসে ঈশ্বর আমায় অনেক দিয়েছেন। কিন্তু মোস্তফা কামালের সেই ঋণ আজও পরিশোধ করতে পারিনি। কিছু ঋণ পরিশোধ করাও যায়না। থাকুক না এমন কিছু অস্তিত্বের ঋণ! পাশাপাশি আমার বাবা মায়ের আশীর্বাদ সেই গ্রামের ছোট যশোদা জীবন থেকে সিআইপি যশোদা জীবন দেবনাথে পরিনত করেছে। বাবার মাত্র ১৫০০ টাকা আয়ের অর্ধেকই আমাকে দিয়ে দিতেন। যমুনা সেতু বানানোর সময়তেও আমি সেখানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছি। জীবনে অনেক সীমাবদ্ধতাকে কাছে থেকে দেখেছি। মানতে ও মানিয়ে নিতে শিখেছি।
এই ক্যাম্পাস: সামনের পরিকল্পনা জানতে চাই?
ড.যশোদা জীবন দেবনাথ: আমি বর্তমানে অনেকগুলো প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। যেগুলোতে আমাকে আইসিটি মিনিস্ট্রি সাহায্য করছে। বাংলাদেশে এখন প্রায় ১৪০০০ এটিএম মেশিন আমার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের সব মানুষের কাছে এখনো এই সুবিধাগুলো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ডিজিটাল প্রেমেন্ট সিস্টেমটা আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছি। একটা শহরের মানুষ যদি ২৪ ঘন্টা ব্যাংকিং সুবিধা পেতে পারে তাহলে একটি গ্রামের মানুষও সেটা পাবে। আমি গ্রামের মানুষের সাথে কানেক্তিভিটি তৈরি করার জন্য এটিএম কে ইউনিয়ন পর্যায়ে নিতে পরিকল্পনা করে রেখেছি, এমনকি কাজও শুরু করেছি। এ সুবিধা চালু হলে গ্রামের মানুষের ঘরের ভেতর টাকা রাখার প্রবণতা কমে যাবে। উন্নত হবে জীবন যাত্রার মান। বাড়বে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।
এই ক্যাম্পাস: আপনার চরিত্রের শক্তিশালী দিক কোনটি বলে মনে করেন?
ড.যশোদা জীবন দেবনাথ: এক কথায় বলতে গেলে আত্মশক্তি। আমি সকালে কাজে বের হই, কিন্তু সন্ধ্যা অবধি কাজ করার পড়েও মনে হয় আমি এখনি কাজে আসছি। ইচ্ছাশক্তি জাগ্রত হলে কেউ আপনাকে থামাতে পারবে না। ইচ্ছাশক্তি জাগ্রত হলে তাকে আটকে রাখা অসম্ভব।
এই ক্যাম্পাস: তরুণদের জন্য কি পরামর্শ?
ড.যশোদা জীবন দেবনাথ: চাকরি একটা বদ নেশা। কারো যদি সৎ ইচ্ছা থাকে তাহলে সে চাকরির পেছনে ঝুঁকবে না। ব্যবসা করবে অথবা ফ্রিল্যান্সিং। অনেক কাজ করার সুবিধা আছে। একটা চাকরি করে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বেতন পায়। অপরদিকে ফ্রিল্যান্সিং করে ১ লক্ষ টাকার উপরে আয় করা সম্ভব। এক্ষেত্রে কিন্তু নিজের স্বাধীনতাও রয়েছে। সুতরাং আমি সবসময় তরুনদের চাকরির পেছনে দৌঁড়াতে নিষেধ করি।
এই ক্যাম্পাস: আমাদের সময় দেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ড.যশোদা জীবন দেবনাথ: আপনাকেও ধন্যবাদ।

Latest articles

বশেমুরবিপ্রবিতে আরশিনগর ছাত্র কল্যাণ সমিতির, ইফতার মাহফিল সম্পন্ন

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ আলমগীর হোসেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ণরত  কুষ্টিয়া...

বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় সমাধিতে বি.এন.সি.সি. সুন্দরবন রেজিমেন্টের শ্রদ্ধা

বঙ্গবন্ধুর ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে...

উদ্বোধন হলো “অমর একুশে গ্রন্থ কুটির-২০২৩”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের উদ্যোগে শুরু হলো চারদিন ব্যাপি "অমর একুশে গ্রন্থ কুটির-২০২৩"। আজ ১৮ই...

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের উদ্যোগে সম্পন্ন হলো “এসপিএসএস & আর ফর ডাটা এনালাইসিস” ওয়ার্কসপ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের উদ্যোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দিন ব্যাপি “এসপিএসএস & আর ফর...

More like this

বশেমুরবিপ্রবিতে আরশিনগর ছাত্র কল্যাণ সমিতির, ইফতার মাহফিল সম্পন্ন

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ আলমগীর হোসেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ণরত  কুষ্টিয়া...

বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় সমাধিতে বি.এন.সি.সি. সুন্দরবন রেজিমেন্টের শ্রদ্ধা

বঙ্গবন্ধুর ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে...

উদ্বোধন হলো “অমর একুশে গ্রন্থ কুটির-২০২৩”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের উদ্যোগে শুরু হলো চারদিন ব্যাপি "অমর একুশে গ্রন্থ কুটির-২০২৩"। আজ ১৮ই...