প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের প্রতিবাদে গত ২৬ মে বিক্ষোভ মিছিল থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে ‘ছাত্রদলের চামড়া তুলে নিবো আমরা, কুবির মাটি ছাত্রলীগের ঘাটি’ এসব শ্লোগান দেন। এর দু’দিন পর গতকাল ২৮ মে বিশ্ববিদ্যালয় ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ. এম. আবদুল মঈন বলেন, ‘অমুকের চামড়া তুলে নিবো আমরা এসবের পিছনে সময় নষ্ট না করে সময়টুকু কাজে লাগাতে হবে।’
উপাচার্যের এমন বক্তব্যে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ। আপরদিকে উপাচার্য ক্যাম্পাসে প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন বলে মন্তব্য করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ।
শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শুভ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লেখেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ তম বছর শেষে ১৭ তে পা দিলো, এই দিবসে ভিসি স্যার বর্তমান ছাত্র সংগঠনের সমালোচনা করেছেন যা ছাত্রলীগ মনে করছে তাদেরকে নিয়েই এই সমালোচনা। কথা পরিস্কার, সত্য সবসময় প্রকাশিত,তা যে করেই হোক তা প্রকাশ হবে কিংবা তা অপরাধ কারিদের কাছে টক কিংবা তেতু লাগে।। আমি বলছিনা ভিসি স্যার সরকার বিরুধী কোন ছাত্র সংগঠনকে খুশি করতে কিংবা ফেবার দিতে বলেছেন তেমনটা। এই সত্যটা হয়তো উনার মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে কিংবা উনি আসলেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে বর্তমান ছাত্রলীগ বেপরোয়া বা তাদের নির্দিষ্ট সাংগঠনিক চর্চা থেকে বহুদূরে। তাই উনি বলেছেন “অমুকের চামড়া তুলে নিবো আমরা” এটা কোন ছাত্র সংগঠনের কাজ হতে পারে না। অবশেষে আব্দুল মঈন স্যার আপনার এই সত্য বচনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারিনা। “ধন্যবাদ” স্যার আপনাকে সত্য বলার জন্য।”
তবে উপাচার্যের এমন বক্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিফাত আহমেদ ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কি স্বাধীনতা বিরোধী জঙ্গি সংগঠন ছাত্র শিবির ও ছাত্রদল কে কুবি ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত করার মিশন নিয়ে এসেছেন? বাঙালির আশা-ভরসা, আস্তার শেষ ঠিকানা, গনতন্ত্রের মানষকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল কটুক্তিমূলক বক্তব্য প্রদান করায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিলে “ছাত্রদল ও শিবিরের চামড়া, তুলে নিব আমরা” স্লোগানের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রোগ্রামে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এই স্লোগানের প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। একটা স্বাধীনতা বিরোধী জঙ্গি সংগঠনের পক্ষ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, উপাচার্য স্যার কথাটি নিঃসন্দেহে ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রী কে উদ্দেশ্য করে কুটক্তির প্রতিবাদ জানিয়ে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে আমরা যে স্লোগান দিয়েছি তা উল্লেখ করে উপাচার্য গতকাল বক্তব্য দিয়েছে। এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ছাত্রদল ও শিবিবের নেতাকর্মীরা ওনার পক্ষ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অংসখ্য স্ট্যাটাস দিয়েছে। তা আসলে কিসের ইঙ্গিত করে সেটি গোয়েন্দা সংস্থা, সরকারী উচ্চমহল, বিশেষ করে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ভাইকে আহ্বান করব বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য। হঠাৎ করে শিবির, ছাত্রদল ভিসির প্রতি পিরিত দেখানোর কারণ কি সেটা খুঁজে বের করতে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি আহ্বান করব।
তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ. এম. আবদুল মঈন বিষয়টি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বলেছেন জানিয়ে বলেন, আমি কোন দলের জন্য এ বক্তব্য দিয়নি। আমি বলছি শিক্ষার্থীদের কাজ হচ্ছে এইটা। ছাত্রদল কে করে আমি চিনিও না, কি মন্তব্য করছে তাও জানিনা। আমার বক্তব্য ছিল ছাত্রদের কি কাজ করার কথা। এখানে ছাত্রলীগের মিছিলের কোন কথাই না। কারো রেফারেন্সে আমি বক্তব্য দেয়নি। বলেছি ছাত্র-শিক্ষকদের কি করার কথা।
তবে ছাত্রলীগের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কােন দলকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দিয় নাই। বলেছি শিক্ষার্থীদের আরও কাজ আছে, পড়াশুনা করা, একাডেমিক চর্চা করা।