30 C
Bangladesh
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

সুপেয় পানির সংকটে কুবির আবাসিক শিক্ষার্থীরা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সুপেয় পানির সংকটে কুবির আবাসিক শিক্ষার্থীরা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থী মনির (ছদ্মনাম)। দীর্ঘদিন ধরে পেটের পীড়ায় ভুগছেন। কয়েকদিন আগে তিনি টাইফয়েড জ্বর থেকে মুক্ত পেয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে হলে ফিরলেও পেটের পীড়ায় ভুগছেন তিনি। চিকিৎসকরা বিশুদ্ধ পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন মনিরকে। শুধু মনির নয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর অধিকাংশ শিক্ষার্থী সুপেয় পানির অভাবে অনিরাপদ পানি পান করছেন। ফলে স্বাস্থ্যঝুকিঁতে পড়ার আশঙ্কা চিকিৎসকদের।

সুপেয় পানির যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় বেসিনের ট্যাপ ও ট্যাংক থেকে অনিরাপদ পানি পান করছেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে সুপেয় পানির ভোগান্তি থাকলেও প্রশাসনের প্রদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্যঝুকি বাড়ছে বলে সংশ্রয় প্রকাশ করেন হলে থাকা আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাচঁটি আবাসিক হলে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে। প্রায় ৬’শ শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র একটি ফিল্টার, তাও দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে আছে। ফিল্টারটি ডাইনিয়ে থাকায় সবসময় ব্যবহারের সুযোগ থাকেনা শিক্ষার্থীদের। সম্প্রতি হলের তিন তলার ছাদে সুপেয় পানির কল থাকলেও ব্যবহারে অনীহা শিক্ষার্থীদের। কাজী নজরুল ইসলাম হলে একটি, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে দুইটি সুপেয় পানির ফিল্টার রয়েছে। নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলের প্রতি তলায় একটি করে ফিল্টার থাকলেও প্রায় সাড়ে তিন’শ জন শিক্ষার্থীর জন্য খুবই অপ্রতুল বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:  বেরোবিতে স্নাতক প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু কাল

এছাড়া শেখ হাসিনা হল উদ্বোধনের দেড় মাসেও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে পারেনি হল প্রশাসন। ফলে অনিরাপদ পানিই ভরসা শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের সুপেয় পানির ব্যবস্থার দাবি করে আসলেও নামেমাত্র ফিল্টার দিয়ে দায় সারেন প্রশাসন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।

বিভিন্ন হলের অর্ধ শতাধিক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, মানুষের অন্যতম চাহিদা সুপেয় পানি। আমাদের হলে এতজন শিক্ষার্থী রয়েছে কিন্তু সুপেয় ব্যবস্থা করে না প্রশাসন। যার ফলে ওয়াশরুম কল থেকে অনিরাপদ পানি পান করতে হয়। এর ফলে অনেকসময় শিক্ষার্থীদের পেটের পীড়ায় ভুগতে হয়। এছাড়া আমাশয়, টাইফয়েডের মত রোগগুলাে অনেকের মাঝে দেখা যায়। অনেকদিন ধরে আমাদের দাবি হলে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হোক কিন্তু গুরুত্বই দিচ্ছেনা প্রশাসন।

মনির (ছদ্মনাম) নামের এক আবাসিক শিক্ষার্থী  বলেন, আমরা নিয়মিত অনিরাপদ পানি পান করছি। ফিল্টারের অভাবে বেসিনের কল ও ট্যাপের পানিই পান করতে হচ্ছে। বেশ কয়েকদিন ধরে আমি পেটের পীড়ায় ভুগছি। ডাক্তার বিশুদ্ধ পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে হলে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নাই, বাধ্য হয়ে ট্যাপের পানি পান করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেখ হাসিনা হলের শিক্ষার্থী বলেন, হল উদ্বোধনের দুই মাসের কাছাকাছি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু পানির ব্যবস্থায় করতে পারেনি হল প্রশাসন। এভাবে কি শিক্ষার্থীরা থাকতে পারে?

আরো পড়ুন:  নোবিপ্রবির সঙ্গে আঙ্কারা ইলদিরহাম বেয়াজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর 

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রভোস্ট ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে প্রকৌশল দপ্তরে ৫’শ লিটারের ড্রাম দিয়ে খাওয়ার ফ্রেশ ট্যাঙ্ক তৈরির জন্য একটা প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি। আশা করি, এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হলে এই সমস্যা থাকবে না এবং পাশাপাশি বাকি দুইটা ফিল্টারের ব্যবহার চলমান থাকবে।’

শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, বিষয়টা আমার আগে জানা ছিল না। আমি এই বিষয়ে অতিদ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
অনিরাপদ পানি সংকট নিরসনের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের ফান্ডে টাকার  স্বল্পতার কারণে এই মুহূর্তে কিছু করতে পারছি না তবে এই বিষয়ে প্রশাসনের সাথে কথা হয়েছিল। তাছাড়া আমাদের ফান্ডে টাকা আসলেই প্রত্যেক তলায় পানির ফিল্টারের ব্যবস্থা করবো।

আরো পড়ুন:  নোবিপ্রবি মিউজিকাল ক্লাব ধ্রুপদের নেতৃত্বে তানভীর-সালমান

অনিরাপদ পানি স্বাস্থ্যঝুকিঁ তৈরি করতে পারে জানিয়ে কুবি মেডিকেলের ডেপুটি চীফ মেডিকেল অফিসার ডা. মাহমুদুল হাসান খান বলেন, অনিরাপদ পানি পান করার কারণে পানিবাহিত রোগ বিশেষ করে ডায়রিয়া, দীর্ঘমেয়াদি আমাশয়, হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসহ টাইফয়েড জ্বর হওয়ার শঙ্কা থাকে। প্রতিদিন মেডিকেলে আসা রোগীদের মধ্যে  প্রায় ৫ থেকে ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পানিবাহিত রোগের সমস্যা নিয়ে  আসেন। এই সমস্যাগুলো পরিত্রাণের জন্যে নিরাপদ পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এবিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজী হয়নি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা পানি পান করার ক্ষেত্রে কোন ধরনের সমস্যা সম্মুখীন হচ্ছে সেই বিষয়ে আমার জানা নেই। তাই এই বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছি না।

Check out our other content

Check out other tags:

Most Popular Articles