28 C
Bangladesh
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

জবির গ্রন্থাগারিক এনামুলের নানান অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের অভিযোগে হবে অপসারণ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়জবির গ্রন্থাগারিক এনামুলের নানান অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের অভিযোগে হবে অপসারণ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক মোঃ এনামুল হকের বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে গ্রন্থাগারের শিক্ষক উপদেষ্টা নিয়োগ করতে না দেওয়া, যোগ্যতা অর্জন না করেই প্রধান গ্রন্থাগারিকের পদ হাসিল, নিয়মবহির্ভূতভাবে ৩ জন ব্যক্তিগত কর্মচারী রাখা, ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে আট বছরেও অটোমেশন প্রকল্পের বাস্তবায়ন না করা সহ শিক্ষার্থীদের হয়রানির বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের হয়রানির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। যোগ্য কাউকে নিয়োগ দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে স্বচ্ছতা ও অধিকতর  শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে সিন্ডিকেটে কয়েকবার শিক্ষকদের মধ্য থেকে শিক্ষক উপদেষ্টা নিযুক্ত করার প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হলেও প্রতিবারই গ্রন্থাগারিক এনামুল তা বাতিল করেছে কোনো এক অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে। অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার একাই নিয়ন্ত্রণ করতে ও তার দৌরাত্ম ধরে রাখতে বিশেষ ক্ষমতা খাটিয়ে শিক্ষক উপদেষ্টা নিয়োগের প্রক্রিয়া রুখে দিয়েছেন তিনি।
এদিকে প্রধান গ্রন্থাগারিক হিসেবে তার যোগ্যতা নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। নিয়মানুযায়ী ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান হতে এসিস্ট্যান্ট লাইব্রেরিয়ান হিসেবে ৫ বছরের যোগ্যতা লাগলেও এনামুলের আছে ৪ বছর।  প্রধান লাইব্রেরিয়ান হওয়ার জন্য ৫ বছর ডেপুটি লাইব্রেরীয়ান থাকার যোগ্যতা লাগলেও তিনি তা ৪ বছরেই উতরে গেছেন।
এছাড়াও গ্রন্থাগারিক এনামুল এক বিরল ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিন জন ব্যক্তিগত কর্মচারী রেখেছেন তিনি। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য দপ্তরে এক বিরল ঘটনা। তার তিনজন ব্যক্তিগত কর্মচারী হলেন নাহিদুল ইসলাম, আব্দুল আলিম এবং আরেকজন নারী কর্মচারী। একজন গ্রন্থাগারিকের তিন জন ব্যক্তিগত কর্মচারী রাখা নিয়েও বিভিন্ন মহল থেকে নানান প্রশ্ন উঠেছে।
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে তালিকা অনুযায়ী সহজে ও দ্রুত বই খুঁজে পেতে ‘অটোমেশন ব্যবস্থা’ চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল আট বছর আগে৷ গ্রন্থাগারিক কিন্তু এনামুল হক এখনও পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন করতে পারেন নি।
ই-লাইব্রেরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১০০ টি কম্পিউটার দেয়া হলেও তার কোনো বাস্তবায়ন ফেখা যায়নি। বরং ই-লাইব্রেরির একাধিক ল্যাপটপ বাড়িতে নিয়ে ব্যবহারেরর অভিযোগ উঠেছে। তার ছত্রছায়ায় এই দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তাও একই কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। লাইব্রেরি কার্ড করার জন্য তার কাছে স্বাক্ষর নিতে গেলে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখা, অশালীন ও উগ্র ব্যবহার, কক্ষ থেকে বকাঝকা করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। তার ছত্রছায়াতেই এই দপ্তরের কর্মচারীরাও বেপরোয়া আচরণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীদের সাথে উগ্র ও অশালীন ব্যবহারে এক কর্মচারী যেন ছাড়িয়ে যান আরেক কর্মচারীকে।
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারকে বাসভবন ও রান্নাঘরে পরিণত করারও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে ইলেক্ট্রিক কেটলি, রাইসকোকার, প্রেসারকোকার ও চুলা ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে রান্না-খাওয়ার ব্যবস্থা করারও প্রমাণ মিলেছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে প্রধান গ্রন্থাগারিক মোঃ এনামুল হক বলেন, ‘সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। কোথাও কোনো অনিয়ম করা হয়নি।’
অটোমেশন প্রকল্পের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ অটোমেশনের জন্য ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সিএসই বিভাগের শিক্ষকরা কাজ করছেন।’ আট বছরেও কেন এই কাজ হয়নি তার উত্তর দেননি তিনি।
শিক্ষার্থীদের হয়রানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এক দেড় ঘন্টা সময় এটা স্বাভাবিক বিষয়। ফরম পূরণ, চেয়ারম্যামের সাইন নেয়া, কার্ড নেয়া। এভাবে সময় লেগে যায়।’ শুধুমাত্র তার স্বাক্ষর নিতে গেলেই অহেতুক শিক্ষার্থীদের ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখার কথা বলে হলে তিনি তার জবাব দেননি।
গ্রন্থাগারিক হিসেবে তার যোগ্যতার প্রশ্নের ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি হলেন, ‘আমার আগে এক জায়গায় ৪ বছরের সার্ভিস ছিল৷ সেটা যোগ হয়েছে এসিস্ট্যান্ট থেকে ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান হতে। আমার বয়স কম থাকায় বলা হয়েছিল ওগুলা যোগ হবে।’ তবে ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান থেকে প্রধান লাইব্রেরিয়ান হতে ৫ বছরের জায়গায় ৪ বছর সময় নেওয়ার কথা বলা হলে তিনি তার জবাব দেননি।
গ্রন্থাগারের অটোমেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম জানান, ‘লাইব্রেরির নিয়ম শৃঙ্খলা বা প্রশাসনিক ত্রুটি বিচ্যুতি দেখার ক্ষমতা আমাকে দেওয়া হয়নি। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অনলাইনে শিক্ষক, গবেষক, ছাত্রছাত্রী পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে কি না। যেমনটা পাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ছাত্র শিক্ষকরা অনলাইনে পত্রপত্রিকা, জার্নাল পড়ার সুযোগ, সেটা আমাদের এখানে তেমন বিস্তৃত সুযোগ নেই। আমাদের ছাত্রদের যেহেতু হল নেই, তাই তারা দূরে থাকে। তাদের পড়াশোনার জন্য অনলাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইন লাইব্রেরির জন্য ডিস্টেন্স এক্সেস খুব গুরুত্বপূর্ণ টার্ম, যা আমাদের এখানে নেই। দীর্ঘ এত বছরেও কেন এই সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না, সে ব্যাপারেও জানা নেই আমার। তবে এটা নিয়ে কাজ করলে অগ্রগতি খুব সহজেই সম্ভব। যেমন আমি দায়িত্ব নিয়েছি ২/১ মাস হবে, এর মধ্যে অনেক কাজ এগিয়ে নিয়ে এসেছি, শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনে আমার কাজের অগ্রগতি প্রদর্শন করবো।’
লাইব্রেরীর কাজের গাফিলতির ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘লাইব্রেরির অনিয়ম, অটোমেশন কেন হচ্ছে না এবং অটোমেশন করার জন্য অধ্যাপক সেলিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এসব ব্যাপারে আপডেট পাব আমরা।’
বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের আগে থেকেই লাইব্রেরিয়ান হিসেবে থাকায় যোগ্যতা ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও এনামুল হক প্রধান লাইব্রেরিয়ান কিভাবে হয়েছে এ ব্যাপারে উপাচার্য কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।
ছাত্রছাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘হয়রানির বিষয়ে কোনো শিক্ষার্থী লিখিত দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেননা ছাত্রছাত্রীর সেবার জন্যই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ছাত্রছাত্রী যদি তার কাছ থেকে উপকৃত না হয়, তবে তাকে সেখানে রেখে লাভ কি। তার চেয়ে যোগ্য কাউকে নিয়োগের ব্যাপারে চিন্তা করব আমরা।’

Check out our other content

Check out other tags:

Most Popular Articles