নবজাতক শিশুদের মৃত্যুর হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। মৃত্যুর কারনের মধ্যে একটি হলো ডায়রিয়া। নবজাতক শিশুর ডায়রিয়া হলে বার বার পাতলা পায়খানা হয় এবং এতে পানির পরিমাণ বেশি থাকে। মলের রং হলুদ, সবুজ বা বাদামী বর্ণের হয়। ডায়রিয়া গরমের মধ্যে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারনে হয়ে থাকে। যেমন রোটা ভাইরাস, নোরো ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কারনেও নবজাতক শিশুর ডায়রিয়া হয়। আর ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে আছে, সালমোনেলা (Salmonella) , শিগেলা (Shigella fexner) , ব্যাসিলাস (Bacillus cereus) , ইশ্চেরিচিয়া কোলাই (Escherichia coli) , ভিব্রিও (Vibrio) । আমরা যদি এই ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া কে নবজাতকের সংস্পর্শে আসা থেকে রুখতে পারি তাহলে, ডায়রিয়ার কারনে যে মৃত্যু হয় তা কমানো বা একদম বন্ধ করা অসম্ভব হলেও ৯৯ শতাংশ কমানো সম্ভব।
নবজাতক শিশুদের ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার কমিয়ে এনে মৃত্যু হার কমানো। নবজাতকের ডায়রিয়া হওয়ার কারন হলো ফুড পয়জনিং। আর যেহেতু ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারনে নবজাতকের ডায়রিয়া হয়ে থাকে, তাই কিভাবে নবজাতককে এই ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে দূরে রাখা যায়, তার বিজ্ঞান সম্মত আলোচনা। ভাইরাস প্রতিরোধে শিশুর মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হাজারে যে কয়জন মারা যায় তার মধ্যে ৬/৭ জনের। শ্বাসকষ্ট রোগে যেনো মারা না যায় এ জন্য বিজ্ঞানসম্মত উপায়। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচ বছরের নিচের অনেক শিশু মারা যায়। নিউমোনিয়া রোগে মৃত্যুর হার কমানো। আর এছাড়াও বাংলাদেশ সহ বিশ্বে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা অসংখ্য। পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার কমানো সহজ নয় কিন্তু কঠিনও নয়। আর এজন্য সবচেয়ে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো সচেতনতা।
বেশিরভাগ শিশুই অসচেতন ও অসাবধানতায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যু হারও বেশি। আর এখানে নবজাতক শিশুদের মৃত্যুর হার কমানোই বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যারা বস্তিতে বসবাস করে, তারা বিভিন্ন দিক থেকে অসচেতন। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে জীবনচলাও অসম্ভব তাদের পক্ষে। যার ফলে গর্ভকালীন সময়ে কিভাবে থাকতে হবে একটু ধারণা পেলেও সম্পূর্ণ ধারণা তারা পায়না। যার ফলে বেশির ভাগ নবজাতক শিশু বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মারা যায়। আর সেইসব শিশুদের মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে কাজ করে যেতে হবে।
নবজাতকের মৃত্যুর অনেকগুলো কারন বিশ্লেষণ করে যেটি বোঝা গেছে, তার কারন ও সমাধান একটি একটি করে তুলে ধরি।
১) ডায়রিয়ার কারনে নবজাতক মৃত্যুর ঘটনা শুনতে পাওয়া যায়। নবজাতকের ডায়রিয়া হওয়ার প্রধান ধরা হয়, ফুড পয়জন। আর যে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার জন্য ডায়রিয়ার সৃষ্টি হয় তা প্রতিরোধ করা। এজন্য ” ফুড এলাট ফর সেভিং দ্যা নিউবর্ণ ” নামে একটি প্রকল্প চালু করতে পারি। এই ডায়রিয়ার ফলে যদি ১০০০ জনে ৬ জন শিশুও মারা যেতো। এখন ২ জন শিশুতে নামিয়ে আনা অবশ্যই সম্ভব।
২) গভীর রাতে প্রসব বেদনা উঠলে চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হওয়ার কারনে শিশু বিভিন্ন কঠিন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যা ধরা পড়ে জন্মানোর পর। এ জন্য ” মিডনাইট কেয়ার ফর প্রেগন্যান্ট ওম্যান ” আরেকটি প্রকল্প হাতে নিতে হবে অজপাড়া গ্রাম পর্যন্ত। এর ফলে ৫/৬ জন শিশুর প্রাণ রক্ষা করতে পারি।
৩) গর্ভবতী নারীকে যে বাড়ীতে রাখা হবে তার আশেপাশে যেনো অনেক গাছপালা থাকে, যে বাড়ীর চারপাশে গাছপালা নেই সেখানে না রাখাই ভালো । আর একদিকে গাছপালার অক্সিজেন গর্ভবতী নারীকে অক্সিজেন যোগাবে অন্যদিকে গর্ভবতী নারীকে বিভিন্ন জটিল রোগের প্রতিরোধ করার ক্ষমতা যোগাবে। আর গর্ভবতী নারীর যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে তার কিছু প্রভাব তার গর্ভের সন্তানের উপরও পড়ে। তাই মা সুস্থ তো শিশুও সুস্থ। আর এর ফলে নিউমোনিয়া সহ শ্বাসকষ্টের যেকোনো জটিল রোগ থেকে রক্ষা করা যাবে শিশুকে। এজন্য এ প্রকল্পের নাম দিয়েছি ” গাছ বাঁচাবে গর্ভবতী শিশুর প্রাণ ”। যেখানে ৩৫-৪০ জন নবজাতক মারা যেতো। সেখানে আমরা এর ফলে সর্বমোট ১৫ – ২০ জন নবজাতক ও ৫ বছরের নিচের শিশুর প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হবো।