29 C
Bangladesh
শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪

সত্যায়নের নামে অযথা হয়রানি বন্ধ হোক

মতামত ও ফিচারসত্যায়নের নামে অযথা হয়রানি বন্ধ হোক

সাদিকুল ইসলাম, একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা একজন মেধাবী ছাত্রের নাম। সম্প্রতি প্রকাশিত বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করে নিচ্ছে্‌। সবকিছু ঠিকঠাক চললেও ঝামেলা বাধলো এক জায়গায়। নিয়োগ বিজ্ঞাপ্তির এক জায়গায় দেখতে পায় যে তার সকল শিক্ষা সনদের ফটোকপি প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে। সাদিকুল যথারীতি একজন কর্মর্কর্তাকে খুঁজে বের করলেন, কিন্তু তার চেম্বারে বাহিরে বড় করে লেখা আছে “এখানে সত্যায়ন করা হয় না”। বাধ্য হয়ে তাকে আরেকজন গেজেটেড কর্মকর্তা কে খুঁজে বের করতে হলো। এবার ঘটলো আরেক বিরম্বনা, সেই কর্মকর্তার ব্যস্ততা থাকার কারণে পরে আসতে বললেন। সত্যায়ন না করতে পারার অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে সাদিক বাসায় ফিরে এসে তার বন্ধুদের বিষয়টি জানালো। একজন বলল এখন সত্যায়ন করার জন্য আর গেজেটেড কর্মকর্তাদের কাছে যাওয়া লাগে না, নীলক্ষেতে গেলেই সব সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। সাদিক তার বন্ধুর কথা মতোই নীলক্ষেতে চলে গেল এবং খুব সহজেই তার শিক্ষা সনদগুলো সত্যায়ন করে নিল।সত্যায়নের নামে অযথা হয়রানি বন্ধ হোক 

গল্পটা কাল্পনিক হলেও এটাই বাস্তব ঘটনা। এভাবেই হাজার হাজার সাদিক প্রতিদিন সত্যায়নের ঝামেলা এড়াতে নীলক্ষেতের ফটোকপির দোকান থেকে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসমুহ অবৈধ ভাবে সত্যায়ন করে নিচ্ছে যা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। মঙ্গল গ্রহে রোবট পাঠিয়ে তার স্থির চিত্র পাঠানো হচ্ছে পৃথিবীতে। পৃথিবীতে বসেই মানুষ মঙ্গলগ্রহ পর্যবেক্ষণ করছে। আর প্রযুক্তির এই উন্নয়নের যুগে আমরা এখনও নির্ভর করছি আদিকালের সেই এনালগ পদ্ধতি সত্যায়নের উপর। যেখানে সত্যায়নের চেয়ে শত শত সহজ পদ্ধতি রয়েছে কাগজ পত্র যাচাই করণের।সত্যায়নের নামে অযথা হয়রানি বন্ধ হোক 

আরো পড়ুন:  ২৬শে মার্চ: হাজার বছরের ত্যাগ ও রক্তের ইতিহাস

প্রথমে আমরা জেনে নেই সত্যায়ন কি এবং কেন প্রয়োজন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি সহ বিভিন্ন চাকরিতে আবেদন করতে গেলে, দাখিলকৃত ডকুমেন্ট সত্যি কিনা অথবা ডকুমেন্টসমূহের অনুলিপি সত্য কিনা এটা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য দেশের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা ডকুমেন্টের উপর স্বাক্ষর করেন সেটা কে সত্যায়ন বলে। অর্থাৎ আপনার ডকুমেন্টগুলো যে সত্য এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সত্যায়ন করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সত্যায়ন ছাড়াও আরও অনেক উপায় আছে যার মাধ্যমে সনদের যাচাই-বাছাই করা যায়।
বর্তমানে এই ডিজিটালাইজেশনের যুগে সনদের যাচাই-বাছাই খুব সহজে ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা যায়। শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট শিক্ষার্থীদের সব রকমের হালনাগাদ তথ্য দেওয়া আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে তাদের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের হালনাগাদ তথ্য দেওয়া থাকে যা খুব সহজেই যাচাই-বাছাই করা যায়।
প্রযুক্তির এ যুগে এখন প্রাচীনকালের এনালগ পদ্ধতির উপর নির্ভর করে থাকা একজন চাকরিপ্রার্থী বা শিক্ষার্থীর হয়রানি ছাড়া আর কিছু না।সত্যায়নের নামে অযথা হয়রানি বন্ধ হোক 

একজন প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তার চেম্বারের সামনে যখন “এখানে সত্যায়ন করা হয় না” লেখা দেখে বা গেজেটেড কর্মকর্তাদের কটু কথা শুনে ফিরে আসতে হয় তখন একজন শিক্ষার্থীর কতটা হয়রানি হয় তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না আবার ভাগ্যক্রমে কোনো কর্মকর্তা যদি রাজি হয়ে যায় তখন শুনতে হয় নানা অপমানজনক কথা। তবে কিছু কর্মকর্তা আছে যারা দয়াবসত ‍সত্যায়ন করে দেই। সত্যনেরে এই এনালগ পদ্ধতি বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশের নামের সাথে সাংঘর্ষিক। যেখানে একজন ব্যক্তিকে শনাক্তের জন্য অসংখ্য আধুনিক উপায় রয়েছে সেখানে এনালগ পদ্ধতির উপর নির্ভর করা মানে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপান্তরে কালক্ষেপণ করা।সত্যায়নের নামে অযথা হয়রানি বন্ধ হোক 

আরো পড়ুন:  শরিফুল ইসলামের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প 

নানা ঝামেলা, নানা হয়রানি থাকা ‍সত্বেওে একজন চাকুরিপ্রার্থী বা শিক্ষার্থীকে সত্যায়িত ডকুমেন্টগুলো নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত দিনে জমা দিতে হয়। কোনো উপায়ান্তর না দেখে বাধ্য হয়ে তারা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে। তৈরি করে নেয় অবৈধ ‍সীল-প্যাড, যা দিয়ে তারা নিজে নিজেই সনদের সত্যায়িত করে। এটা অবৈধ কিন্তু তাদের সনদ গুলো বৈধ। অনুমতি ছাড়া অন্যের ‍সীল-প্যাড ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা এরকম সিস্টেমের মারপ্যাঁচে পরে বাধ্য হচ্ছে এমন অনৈতিক কাজ করতে। সত্যায়নের ঝামেলা সবচেয়ে বেশি পোহাতে হয় গ্রাম অথবা মফস্বল এলাকা থেকে আসা চাকরি প্রত্যাশীদের। তাদের জানাশোনা কোনো গেজেটেড কর্মকর্তা না থাকার কারণে অবর্ণনীয় হয়রানি হতে হয় যা এই ডিজিটাল যুগে কাম্য নয়। একজন প্রার্থী চূড়ান্ত নিয়োগের আগে তার ‍সকল ‍সনদ যাচাই করা হয়। যাচাই না করে কোন ভাবেই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়না, তাহলে সত্যায়নের নামে অযথা হয়রানি করা হয় কেন?সত্যায়নের নামে অযথা হয়রানি বন্ধ হোক 

আরো পড়ুন:  ভালোবাসার আরেক নাম কাঠগোলাপ

কোন পার্থী যদি নকল বা ভূয়া ‍সনদ দ্বারা চাকরিতে আবেদন করে তাহলে চূড়ান্ত নিয়োগের সময় অবশ্যই ধরা পরে যাবে। সনদের মৌলিকত্ব যাচাই বাছাইয়ের হাতের নাগালে এত ‍সহজ পদ্ধতি থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় এরকম
অযৌক্তিক হয়রানি কাম্য নয়। সত্যায়নের জন্য গেলে কিছু কর্মকর্তাগন সত্যায়নপ্রার্থীকে ভিক্ষুকের চাইতেও নিচু স্তরের মনে করে যা ইচ্ছে তাই ব্যবহার করে তবে সকল কর্মকর্তাগন এমনটা করেন না। সত্যায়ন প্রক্রিয়া মূলত জনগনের দাসভিত্তিক মানসিকতা ধরে রাখার জন্য একটি ঔপনিবেশিক প্রশাসনিক দৃষ্টান্ত মাত্র। শিক্ষার্থদের এই দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছে। তাদের জিম্মি করে অন্যায় ভাবে লুফে নিচ্ছে অর্থ। ফলে শিক্ষার্থী বা চাকরি পার্থীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সত্যায়ন নামক অ-যৌক্তিক ঝামেলার ইতি ঘটানো সময় এখনই। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে, ‍সত্যায়ন পদ্ধতি ডিজিটাল করে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তর করা হোক।সত্যায়নের নামে অযথা হয়রানি বন্ধ হোক 

অবিলম্বে সত্যায়ন পদ্ধতি বাতিল করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
নিয়োগদাতাদের ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল করতে হবে। তবেই না বন্ধ হবে সত্যায়ন নামের অযথা হয়রানি। অদম্য উদ্যোমে এগিয়ে যাবে সোনার বাংলদেশ।

লেখক: ওবায়দুর রহমান, শিক্ষার্থী: ইংরেজি বিভাগ,ঢাকা কলেজ

Check out our other content

Check out other tags:

Most Popular Articles